সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা করো।

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা করো।

১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা করো।
১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা করো।

Discuss the impact of February Revolution.

১৮৪৮ সালে ফ্রান্সের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সংঘটিত হয়। ফ্রান্স তথা ইউরোপের ইতিহাসে এই বিপ্লবের প্রভাব ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সমগ্র বিশ্বের কাছে সুদূর প্রসারী। বিশ্বব্যাপী এই প্রভাবের কারণে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে প্রথম সম্ভাব্য বিশ্ব-বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয়।

ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব :

  1. দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে বুর্জোয়া রাজতন্ত্রের পতন হয় এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
  2. প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার স্বীকৃত : এই বিপ্লবের পর ফ্রান্সের জাতীয় প্রতিনিধি সভার দশ জন সদস্য কে নিয়ে গঠিত হয় কার্য নির্বাহক সমিতি। এই সমিতি সার্বিক প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটদানের অধিকার কে স্বীকৃতি দেয়। 
  3. চার বছর অন্তর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : সার্বিক প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ৭৫০ সদস্যের এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। এই আইনসভায় চার বছর অন্তর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নীতি গৃহীত হয়।
  4. নিম্ন বুর্জোয়াদের ক্ষমতায়ন : ১৮৩০ সালে জুলাই বিপ্লবের ফলে রাজনৈতিক ক্ষমতা অভিজাতাদের হাত থেকে উচ্চ বর্জ্যুয়াদের হাতে চলে যায়। আর ১৮৪৮ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে সেই ক্ষমতা নিম্নবর যাদের হাতে চলে যায়।
  5. মেটারনিকতন্ত্রের প্রভাব : ফ্রান্স মেটারনিকতন্ত্রের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়।
  6. কবি সাহিত্যিকদের নেতৃত্ব : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের যোগ দিয়ে কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক এবং অধ্যাপকরা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ফলে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব জনতার বিপ্লব হিসাবে চিহ্নিত হয়। 

ইউরোপে ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব :

  1. সামন্ততন্ত্রের পতন : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের পতন সুনিশ্চিত হয়। এরই সূত্র ধরে ভূমিদাস প্রথা বিলুপ্ত হতে শুরু করে।
  2. প্রথম সম্ভাব্য বিশ্ববিপ্লব : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাবে প্রায় ১৫ টি ইউরোপীয় দেশে মেটানিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন শুরু হয়; যা পরবর্তীকালে ইউরোপ ছাড়িয়ে প্রায় সমগ্র বিশ্বের ছড়িয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক এরিক হবসবম এই প্রভাবের কথা মাথায় রেখে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে প্রথম সম্ভাব্য বিশ্ববিপ্লব বলে অভিহিত করেছেন।
  3. ঐক্য আন্দোলনের সূত্রপাত : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাবে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে উদারনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়। এরই সূত্র ধরে জার্মানির ঐক্য আন্দোলনের সুপ্রভাত ঘটে। 
  4. ইতালির ঐক্য আন্দোলন গতি পায : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে ইতালির বিভিন্ন জায়গায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জোয়ার আসে। ম্যাৎসিনি ও ক্যাভুরের হাত ধরে ইতালির ঐক্য আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
  5. জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু : ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাবে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আছড়ে পড়ে। স্পেন পর্তুগাল নরওয়ে সুইজারল্যান্ড এমনকি ইংল্যান্ডেও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। 

মূল্যায়ন :

বস্তুত ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফুলকি গোটা ইউরোপকে আলোড়িত ও আলোকিত করেছিল। ঐতিহাসিক লজ (Lodeg) এর ভাষায়, " The Spark that flew from the France furnace fell on unsound timbers of Europe and caused a great conflagration"*. তবে মনে রাখতে হবে, ইউরোপের জাতীয়তাবাদী আশা-আকাঙ্ক্ষা এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলেও তা পূর্ণ হতে আরো কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

* ফ্রান্সের চুল্লি থেকে উড়ে আসা স্ফুলিঙ্গ ইউরোপের অস্থির কাঠের উপর পড়েছিল এবং একটি বড় দাবানল সৃষ্টি করেছিল।

মন্তব্যসমূহ

📘 নবম শ্রেণি 📘 : 👩 যে অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর চাও তাতে ক্লিক করো

------------------------------------------------------------------------

OUR BOOKS FOR WBBSE & WBCHSE

OUR OTHER BOOKS (ICSE & CBSE)

------------------------------------------------------------------------

সবচেয়ে বেশি পড়া হয়েছে যে প্রশ্নগুলো :

ফরাসি বিপ্লবের কারণ

১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের জন্য রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কারন গুলি আলোচনা কর।  অথবা, ফরাসি বিপ্লবের কারনগুলি আলোচনা কর। ফরাসি বিপ্লব ঃ ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব শুধু ফ্রান্সের ইতিহাসে নয়, গোটা বিশ্বের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।এই বিপ্লব হওয়ার পিছনে ছিল দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত নানা অভাব অভিযোগ। ঐতিহাসিক লেফেভরের-এর মতে ফরাসি বিপ্লবের উৎস অনুসন্ধান করতে হবে তার অতীত ইতিহাসের মধ্যে। ফরাসি বিপ্লবের কারন ‌ফরাসি বিপ্লবের পিছনে প্রকৃতপক্ষে তিনটি কারণ দায়ী ছিল-  ‌১) রাজনৈতিক কারন ২) সামাজিক কারণ ৩) অর্থনৈতিক কারণ ফরাসি বিপ্লবের  রাজনৈতিক কারন ফরাসি বিপ্লব ছিল প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বুঁরবো রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।রাজারা ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং তারা বংশানুক্রমিকভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। রাজাদের দুইরকম ভাবে শাসনকার্য চালাত-- ক) রাজাদের দুর্বল শাসন : ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই(১৬৪৩-১৭১৫ খ্রীঃ) বিলাস ব্যসনে মগ্ন থেকে স্বৈরাচারী ক্ষমতার মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।তিনি বলতেন “আমিই রাট্র”। পরবর্তী রাজা...

ভিয়েনা সম্মেলনের মূলনীতি

ভিয়েনা সম্মেলনের মূলনীতিগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো ভিয়েনা সম্মেলনের মূলনীতি ১৮১৫ সালে ভিয়েনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের নেতৃবৃন্দ ইউরোপের পুনর্গঠন এর উদ্দেশ্যে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা ভিয়েনা সম্মেলনের মূলনীতি নামে পরিচিত। এই নীতি গুলি ছিল ১) ন্যায্য অধিকার নীতি ২) ক্ষতিপূরণ নীতি এবং ৩) শক্তিসাম্য নীতি। ভিয়েনা সম্মেলনের মূল নীতিগুলি হল, ১ ) ন্যায্য অধিকার নীতি :  এই নীতির মূল কথা হলো ইউরোপে বিপ্লব পূর্ববর্তী রাজবংশ গুলিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা। এই নীতির ফলে ফ্রান্সে বুুুরবোঁ বংশ হল্যান্ডে  অরেঞ্জ বংশ , তা নিয়ায় ভিদ্মতে  সাতবাহন বংশ এবং  মধ্য ইতালীতে  পোপ  ক্ষমতা লাভ করে। ২) ক্ষতিপূরণ নীতি :   এই নীতির মূল কথা হলো ক্ষতিপূরণ দেওয়া। এই নীতি প্রয়োগ করে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যারা প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইউরোপ ও ইউরোপের বাইরের নেপোলিয়ন অধিকৃত ভূখণ্ড গুলি ভাগাভাগিি করে। ৩) শক্তিসাম্য নীতি :  ভবিষ্যতে ফ্রান্স যাতে পুনরায় শক্তিশালী হয়ে ইউরোপের শান্তি নষ্ট না করতে তা নিশ্চিত করা এই নীতির মূল লক...

ইতালির ঐক্য আন্দোলন, জোসেফ ম্যাৎসিনি ও ইয়ং ইতালি আন্দোলনের ভূমিকা

ইতালির ঐক্য আন্দোলনে জোসেফ ম্যাৎসিনি ও ইয়ং ইতালি আন্দোলনের ভূমিকা উল্লেখ করো। প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি ইতালি ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে বিভিন্ন ছোটবড় পরস্পর-বিরোধী রাজ্যে বিভক্ত ছিল। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন এই রাজ্য জয় করে ঐক্যবদ্ধ করলেও তাঁর পতনের পর ভিয়েনা বন্দোবস্তের দ্বারা ইটালিকে আবার বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত করে সেখানে অস্ট্রিয়া-সহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। ম্যাৎসিনি ও  ইয়ং ইতালি আন্দোলন ঃ উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইতালির জাতীয়তাবাদীরা রাজনৈতিক ঐক্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন  ম্যাৎসিনি (১৮০৫-'৭২খ্রি.) ঐতিহাসিক গ্রেনভিলের  মতে, ম্যাৎসনি ছিলেন "ইতালির প্রজাতান্ত্রিক ঐক্যের মস্তিষ্ক এবং বিধিপ্রেরিত নায়ক।" [1] প্রথম জীবন:   ম্যাৎসিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক, সুলেখক, চিন্তাবিদ, বাগ্মী, ও বিপ্লবী। তিনি ইতালির জেনোয়া প্রদেশ জন্মগ্রহণ করেন (১৮০৫ খ্রি.)। অল্প বয়সেই তিনি স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ইতালির স্বপ্ন্ দেখতে শুরু করেন। প্রথম জীবনে তিনি কার্বোনারি নামে একটি গুপ্ত সমিতিতে যোগ দিয়ে ইতালিকে বিদেশি শাসনমুক্তত কর...

ইতালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাভুরের ভূমিকা

ইতালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাভুরের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো। উনবিংশ শতকে প্রথমদিকে ইতালি বিভিন্ন ছোট-বড় রাজ্যে বিভক্ত ছিল এবং পিডিমন্ট-সার্ডিনিয়া ছাড়া ইতালির সব রাজ্যে অস্ট্রিয়া-সহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। ইতালির ঐক্য আন্দোলনে ক্যাভুরের ভূমিকা বিদেশি শক্তিগুলিকে বিতাড়িত করে বহুধা বিভক্ত ইতালির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যারা অসমান অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাউন্ট ক্যামিলো বেনসো ডি ক্যাভুর (১৮১০-১৮৬১ খ্রি.)। [1] মতাদর্শ: [i] বিদেশি সাহায্য গ্রহণ: বাস্তববাদী ক্যাভুর উপলব্ধি করেন যে বৈদেশিক শক্তির সাহায্য ছাড়া অস্ট্রিয়ার মতো প্রবল শক্তিকে ইতালি থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। [ii] স্যাভয় বংশের নেতৃত্ব: ক্যাভুর  পিডিমন্ট-সার্ডিনিয়া   স্যাভয় বংশের  অধীনে ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করার নীতি গ্রহণ করেন। [iii] পিডমন্টের শক্তিবৃদ্ধি: পিডিমন্টের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। [2] বিদেশি সাহায্য: [i] ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিকে সহায়তা:  অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশি শ...

কোড নেপোলিয়ন

কোড নেপোলিয়ন বলতে কী বোঝো? কোড নেপোলিয়ন-এর মাধ্যমে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কীভাবে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ রক্ষা করেন? কোড নেপোলিয়ন কী ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কার কর্মসূচিগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হল ‘কোড নেপোলিয়ন’ (Code Napoleon) বা আইনবিধি প্রবর্তন। তার শাসনকালের পূর্বে ফ্রান্সের নানা স্থানে নানা ধরনের বৈষম্যমূলক ও পরস্পরবিরোধী আইন প্রচলিত ছিল। নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সে একই ধরনের আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে ৪ জন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে একটি পরিষদ গঠন করেন। এই পরিষদের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে যে আইনবিধি সংকলিত হয়, তা ‘কোড নেপোলিয়ন’  নামে খ্যাত। কোড নেপোলিয়নের বৈশিষ্ট্য ঃ ২২৮৭টি বিধি সংবলিত এই আইন সংহিতা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল— দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং বাণিজ্যিক আইন। আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি ছিল এই আইন সংহিতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।  নেপোলিয়ন বিপ্লবের আদর্শ, প্রাকৃতিক আইন ও রোমান আইনের সমন্বয় সাধন করে কোড নেপোলিয়ন রচনা করেছিলেন। প্রথমত: এই আইনের ফল...

ফ্রান্সের ইতিহাসে কাকে 'রাজনৈতিক কারাগার’ (Political Prison) বলা হয় ? এবং কেন

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে বাস্তিল দুর্গ 'রাজনৈতিক কারাগার' হিসেবে পরিচিত ছিল। বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ নামক গ্রেফতারি পরোয়ানার সাহায্যে রাজকীয় কর্মচারীরা যে-কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে বাস্তিল দুর্গে আটক করে রাখত বলে একে 'রাজনৈতিক কারাগার’ বলা হয়। রাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করার অপরাধে দার্শনিক ভলতেয়ার-কেও বাস্তিল দুর্গে আটক করে রাখা হয়।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

 ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল Causes and consequences of the Crimean War ক্রিমিয়ার যুদ্ধ : অটোমান সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে রাশিয়া তুরস্ক দখল করার চেষ্টা করলে, বলকান অঞ্চলে গুরুতর সংকট সৃষ্টি হয় যা, বলকান সমস্যা নামে পরিচিত। মূলত এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে ১৮৫৩ সালে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ১৮৫৪ সালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইতালির পিডমন্ট-সার্ডেনিয়া সহ কিছু দেশ তুরস্কের পক্ষ অবলম্বন করলে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ : ক্রিমিয়ার যুদ্ধের কারণ কে দু ভাগে ভাগ করা যায়।  প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কারণ। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের পরোক্ষ কারণ : রাশিয়ার শক্তি বৃদ্ধি : অটোমান সাম্রাজ্যের দুর্বলতার কারণে বলকান সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে রাশিয়া ১৮৩০ সালে তুরস্কের কাছ থেকে বসফরাস ও দার্দানেলস প্রণালীতে রুশ জাহাজ চলাচলের অধিকার আদায় করে। রাশিয়ার এই শক্তি বৃদ্ধিতে ইংল্যান্ড ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তুরস্ক দখলের পরিকল্পনা : ১৮৫৩ সালে রাশিয়া ইংল্যান্ড এর কাছে তুরস্ককে ব্যবচ্ছে...

ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব হয়েছিল কেন?

ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লবের কারণ ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লবের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়। ১) কৃষি বিপ্লব : নবজাগরণের ফলে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হয়। নতুন ও উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। এই কৃষি বিপ্লব শিল্পবিপ্লবকে কাঁচামাল দিয়ে সাহায্য করেছিল। ২) সুলভ শ্রমিক : ষোড়শ শতক থেকে ইংল্যান্ডে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই বর্ধিত জনসংখ্যা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সুলভ শ্রমিকের যোগান দিয়েছিল। ৩) মূলধনের প্রাচুর্য : ১৭ শতক থেকে ইংল্যান্ড বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। এই মুনাফা শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের যোগান দিয়েছিল। ৪) বাজার : ঔপনিবেশিক দ্বন্দ্বে জয়লাভের ফলের শিল্প পণ্যের বাজার পেতে সুবিধে হয়েছিল। ৫) খনিজ : শিল্পের প্রয়োজনীয় খনিজসম্পদ যেমন লোহা ও কয়লা ইংল্যান্ডে প্রচুর পাওয়া যেত। ৬) উন্নত পরিবহন : নবজাগরণ ও নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। এই পরিবহন ব্যবস্থা শিল্পবিপ্লবে সাহায্য করেছিল। এই সমস্ত অনুকূল পরিবেশ ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করেছি...

জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্ক কি নীতি গ্রহণ করেন? অথবা, জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্কের 'রক্ত ও লৌহ নীতি' সম্পর্কে আলোচনা করো।

জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্ক কি নীতি গ্রহণ করেন?  অথবা,  জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্কের 'রক্ত ও লৌহ নীতি' সম্পর্কে আলোচনা করো চতুর্থ ফ্রেডরিক উইলিয়ামের পরবর্তী রাজা প্রথম উইলিয়াম প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিলেন। জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্কের নীতি ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে অটো ফন বিসমার্ক  (১৮৬২-১৮৯০ খ্রি.) প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হলে প্রথম উইলিয়ামের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ পায়। জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তিনি নিম্নলিখিত নীতি গ্রহণ করেন -  [1] রাজতন্ত্রে বিশ্বাস: রাজতন্ত্রে  বিশ্বাসী বিসমার্কের উদ্দেশ্য ছিল প্রশিয়ার রাজতন্ত্রের অধীনে সমগ্র জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং প্রাশিয়ার রাজতান্ত্রিক শাসনের ভাবধারায় জার্মানিকে প্রভাবিত করা। [2] রক্ত ও লৌহ:  বিসমার্ক গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ওপর নয়, 'রক্ত ও লৌহ নীতি 'র উপর আস্থাশীল ছিলেন। তিনি প্রাশিয়ার আইন সভায় ঘোষণা করেন যে, "বিতর্ক ভোটের দ্বারা নয়, রক্ত ও লৌহ নীতির মাধ্যমেই জার্মানির সমস্যার সমাধান হবে।" [3] সামরিক ...

ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের (১৮৪৮ খ্রি.) কারণ

ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের (১৮৪৮ খ্রি.) কারণ গুলি কি ছিল? দশম চার্লস রাজত্বকালে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের মাত্র তিনদিনের রক্তপাতহীন জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্স আলিয়েন বংশের সূচনা হয় এবং এই বংশের রাজা লুই ফিলিপ ফ্রান্সের সিংহাসন লাভ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র 'জুলাই রাজতন্ত্র' নামে পরিচিত। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে লুই ফিলিপ তথা জুলাই রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ফ্রান্সে 'দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র' প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ: বিভিন্ন ঐতিহাসিক ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের জন্য বিভিন্ন কারণকে দায়ী। যেমন- [1] বুর্জোয়াদের আধিপত্য: লুই ফিলিপ একটি বুর্জোয়া পার্লামেন্টের দ্বারা রাজপদে নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর দেশে বুর্জোয়াদের স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা হয়। ফলে দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। [2] জনসমর্থনের অভাব: বিভিন্ন কারণে লুই ফিলিপের জনসমর্থনের অভাব ছিল। যেমন- [i] নেপোলিয়নের অনুগামীরা তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র লুই বোনাপার্টকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল। [ii] ন্যায্য অধিকার নীতির সমর্থকরা দশম চার্লসের উত্তরাধিকারী ডিউক অব বেরিকে সিংহাসনের বৈধ দাবিদার বলে মনে করতেন।...