ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের (১৮৪৮ খ্রি.) কারণ গুলি কি ছিল?
দশম চার্লস রাজত্বকালে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের মাত্র তিনদিনের রক্তপাতহীন জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্স আলিয়েন বংশের সূচনা হয় এবং এই বংশের রাজা লুই ফিলিপ ফ্রান্সের সিংহাসন লাভ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র 'জুলাই রাজতন্ত্র' নামে পরিচিত। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে লুই ফিলিপ তথা জুলাই রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ফ্রান্সে 'দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র' প্রতিষ্ঠিত হয়।ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ:
বিভিন্ন ঐতিহাসিক ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের জন্য বিভিন্ন কারণকে দায়ী। যেমন-[1] বুর্জোয়াদের আধিপত্য: লুই ফিলিপ একটি বুর্জোয়া পার্লামেন্টের দ্বারা রাজপদে নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর দেশে বুর্জোয়াদের স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা হয়। ফলে দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
[2] জনসমর্থনের অভাব:
বিভিন্ন কারণে লুই ফিলিপের জনসমর্থনের অভাব ছিল। যেমন-[i] নেপোলিয়নের অনুগামীরা তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র লুই বোনাপার্টকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিল।
[ii] ন্যায্য অধিকার নীতির সমর্থকরা দশম
চার্লসের উত্তরাধিকারী ডিউক অব বেরিকে সিংহাসনের বৈধ দাবিদার বলে মনে করতেন।
[iii] ক্যাথলিকরা লুই ফিলিপে ধর্মনিরপেক্ষ নীতির এবং প্রজাতন্ত্রীরা রাজতন্ত্র তীব্র বিরোধী ছিলো।
[3] ত্রুটিপুর্ণ বিদেশনীতি:
লুই ফিলিপ যে-কোনো মূল্যে বৈদেশিক যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তি রক্ষা করার নীতি গ্রহণ করতে। তিনি-
[i] পোল্যান্ড ও ইতালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে
নিরপেক্ষ থাকেন,
[ii] বেলজিয়ামের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহণে ব্যর্থ হন,
[iii] মিশর ও তুরস্কের বিরোধে ভুল নীতি গ্রহণ করেন,
[iv] আফ্রিকা ও নিকট প্রাচ্যে ভুল
বিদেশনীতি গ্রহণ করেন।
এরূপ দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় বিদেশনীতি দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ করে। জনগন ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে সামিল হন।
[i] পোল্যান্ড ও ইতালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে
নিরপেক্ষ থাকেন,
[ii] বেলজিয়ামের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহণে ব্যর্থ হন,
[iii] মিশর ও তুরস্কের বিরোধে ভুল নীতি গ্রহণ করেন,
[iv] আফ্রিকা ও নিকট প্রাচ্যে ভুল
বিদেশনীতি গ্রহণ করেন।
এরূপ দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় বিদেশনীতি দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ করে। জনগন ফেব্রুয়ারি বিপ্লবে সামিল হন।
[4] শ্রমিকদের ক্ষোভ:
ফ্রান্সে শ্রমিকদের অধিক সময় খাটানো, কম মজুরি প্রদান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস প্রভৃতির ফলে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সরকার শ্রমিক কল্যাণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা ক্ষুব্ধ ছিল। লুই ব্লা, সাঁ সিমোঁ প্রমুুুখ সমাজতান্ত্রিক নেতা শ্রমিকদের
সঙ্ঘবদ্ধ করতে এগিয়ে আসেন।
সঙ্ঘবদ্ধ করতে এগিয়ে আসেন।
[5] আর্থিক দুরাবস্থা:
১৮৪০-এর দশকে খরা, শস্যহানি প্রভৃতির ফলে ফ্রান্সস তীব্র খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকটের শিকার হয়। শিল্প ও বাণিজ্যে মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকার সম্যসা তীব্র আকার ধারণ করে। সরকার এই সংকটের সমাধানে ব্যর্থ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়।
[6] ভোটাধিকারের দাবি:
লুই ফিলিপের রাজত্বে ফরাসি জাতি যখন হতাশাগ্রস্ত, তখন ঠিয়ার্স, লা-মার্টিন প্রমুুুখ নেতা ভোটাধিকার সম্প্রসারণ এবং আইনসভার নির্বাচনে দুর্নীতি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারীদের দাবিগুলি লুই ফিলিপের প্রধানমন্ত্রী গিজো অগ্রাহ্য করলে প্যারিসের এক জনসভা (২২ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৮৪৮ খ্রি.) অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তুুু পুলিশ এই জনসভা ভেঙে দেয়।
মূল্যায়ন:
প্যারিসের জনসভা পুলিশ ভেঙে দিলে শ্রমিকরা রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তোলে। গিজোর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভরত জনতার ওপর রক্ষীরা গুলি চালালে ২৩ জন নিহত হয়। এই ঘটনায় প্যারিস-সহ সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে আন্দোলনের চাপে লুই ফিলিপ সিংহাসন ত্যাগ করে ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়। এভাবে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সম্পন্ন হয়।
ফলাফল
উত্তরমুছুন